সড়কে মরন ফাঁদ – ব্লাইন্ড স্পটঃ কীভাবে ব্লাইন্ড স্পট এড়িয়ে ড্রাইভ করবেন?
ব্লাইন্ড স্পট এড়ানোর সবচাইতে উত্তম উপায় হলো গাড়ির মিরর সঠিক স্থানে ও সঠিক এঙ্গেলে এডজাস্ট করে রাখা। সঠিক এঙ্গেলে এডজাস্ট করলে হয়ত আপনার দৃষ্টি সীমার মধ্যে সবকিছুই চলে আসবে না, কিন্তু আপনার ব্লাইন্ডস্পটের এরিয়ার পরিমাণ যতটা সম্ভব কমানো যাবে।
চালকের আসনে বসে গাড়ির চারপাশ এক নজরে দেখা সম্ভব হয়ে উঠে না। সে জন্য গাড়ির ডানে, বামে এবং পেছনের দৃশ্য দেখার জন্য লুকিং গ্লাস (পার্শ্ব আয়না) এবং রিয়ার মিরর (চালকের আসন থেকে পেছনে দেখার আয়না) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এরপরেও চলন্ত অবস্থায় চালক গাড়ির চারপাশের কিছু অংশের ওপর নজর রাখতে পারেন না। লুকিং গ্লাস ও রিয়ার মিরর ব্যবহারের পরও চালকের দৃষ্টির বাইরে থেকে যাওয়া স্থানগুলোকে ব্লাইন্ড স্পট বলা হয়ে থাকে। আর এই ব্লাইন্ড স্পটের কারণে দক্ষ চালকও হরহামেশা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।
মোটরসাইকেল, গাড়ির আকার যত বড় হয় ব্লাইন্ড স্পট তত বেশি হয়। ট্রাক, লড়ি বা বাসের চালকের সঙ্গে একজন সহায়তাকারী থাকেন। তিনি ব্লাইন্ডস্পটে কোন গাড়ি বা মোটরসাইকেল, সাইকেল এমনকি মানুষের অবস্থান সম্পর্কে চালককে সতর্ক করেন। কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেলে পথ চলার সময় চালককেই চারপাশ দেখে পথ চলতে হয়। এ কারণে একটু অসতর্ক হলেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানোর সময় বেশকিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলে ব্লাইন্ড স্পটের কারণে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ব্লাইন্ড স্পটের জায়গা সম্পর্কে ধারণা
মোটরসাইকেল চালকরা ব্লাইন্ডস্পটে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হন। কারণ, যিনি মোটরসাইকেল চালান তিনি ভাবেন দ্রুতগতিতে অন্য গাড়ি চালকের ব্লাইন্ডস্পট অতিক্রম করা যাবে। এ সময় পাশে থাকা গাড়ি, জিপ, বাস বা ট্রাকের চালকরাও ধরে নেন মোটরসাইকেলচালক সতর্কতার সঙ্গে তাঁর গাড়ি অতিক্রম করবে। কিন্তু অনেক সময়ই তা ঘটে না। যান্ত্রিক সমস্যা বা চালকের অদক্ষতার কারণে মোটরসাইকেল বা গাড়ি ব্লাইন্ড স্পটের মধ্যে অবস্থান করায় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। এ জন্য মোটরবাইক বা গাড়ি চালককে নিজের এবং অন্য গাড়ির চালকের ঠিক কোন স্থানটি ব্লাইন্ডস্পট সে সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
সাধারণত গাড়ির লুকিং গ্লাসের খুব কাছাকাছি জায়গা চালক ভালোভাবে দেখতে পায় না। তাই এসব স্থানে পাশাপাশি মোটরসাইকেল বা গাড়ি চালানো ঠিক নয়। তবে রাস্তা ফাঁকা থাকলে সেই স্থান দ্রুত অতিক্রম করলে দুর্ঘটনার শঙ্কা কম থাকে। তবে এ সময় অবশ্যই পাশের গাড়ি চালকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পাসিং লাইট জ্বালিয়ে বা হর্ন বাজিয়ে সতর্কভাবে গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে এগোতে হবে।
সিগন্যাল বাতি
গাড়ি বা মোটরসাইকেল ডানে, বামে বা মোড় ঘোরানোর সময় সিগন্যাল লাইটের (সংকেত আলো) সঠিক ব্যবহার করা উচিত। পথ চলার সময় মোড় ঘুরতে কিছু দূর আগে থেকেই সিগন্যাল লাইট ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি গাড়ির ক্ষেত্রে বাম পাশে থেকে মোড় ঘোড়ার চেষ্টা করতে হবে। ডান পাশে মোড় ঘোরার সময় চালকরা সাধারণত অতিরিক্ত জায়গা রাখেন না। তাই ডান পাশে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে কখনোই গাড়ি বা মোটরসাইকেল ঘোরানোর ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।
নিরাপদ দূরত্ব
রাস্তায় চলার সময় অন্য গাড়ি বা মোটরসাইকেল থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। মনে রাখতে হবে, দ্রুত গতিতে চলা গাড়ি বা মোটরসাইকেল থামতে বেশি সময় প্রয়োজন হয়। এ জন্য সামনের গাড়ি হঠাৎ ব্রেক করলে আপনার মোটরসাইকেল বা গাড়ি থামানো যায়, পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে। এ দূরত্বকে ব্রেকিং ডিসটেন্স (থামার দূরত্ব) বলে। ভারী যানবাহনের সঙ্গে ধাক্কা খেলে তা মুখোমুখি সংঘর্ষের মতোই ভয়ংকর হয়। এ ক্ষেত্রে ট্রাক বা বাসের পেছনে চলার সময় সামনের গাড়ি অনুসরণ করা নিরাপদ। ট্রাকের চালকরা সরাসরি পেছনের গাড়ি বা মোটরসাইকেলকে দেখতে পান না। তাই চলন্ত রাস্তায় ট্রাক অতিক্রম করার সময় অবশ্যই হর্ন বাজানোর পাশাপাশি পাসিং লাইট জ্বালিয়ে চালককে সতর্ক করতে হবে।
অন্য চালকের কাছে নিজেকে দৃশ্যমান
কোনো চালক ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটান না। তাই আপনি মোটরসাইকেল বা গাড়ি যেটাই চালান না কেন, অন্য গাড়ির চালকের কাছে নিজেকে দৃশ্যমান করতে হবে। এ জন্য সামনের গাড়ি অতিক্রমের সময় প্রয়োজনে হর্ন বা হেডলাইট জ্বালিয়ে সংকেত দিয়ে নিজের অবস্থান বা ইচ্ছে সম্পর্কে জানান দিতে হবে। এতে অন্য চালক আপনার গাড়ি বা মোটরসাইকেলের আকার বুঝে জায়গা ছেড়ে গাড়ি চালাতে পারবে। এ কারণে গতি বেশি থাকলেও দুজনই নিরাপদে পথ চলতে পারবেন।
চালকের আসনে মনোযোগ
চলতি পথে সামান্য অসতর্কতাও বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এ জন্য সামনের গাড়ি অতিক্রমের সময় ঠিক কতটুকু জায়গা প্রয়োজন, সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। পথ চলার সময় সামনে তাকানোর পাশাপাশি নিয়মিত লুকিং গ্লাসে নজর দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য যাত্রা শুরুর আগেই চালকের আসন থেকে সবচেয়ে বেশি জায়গা দেখার উপযোগী করে লুকিং গ্লাসের অবস্থান নির্বাচন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, লুকিং গ্লাসের মাধ্যমে আশপাশের বা পেছনের যত বেশি স্থান দেখা যাবে, তত দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কম হবে।