Archives 2023

শীতে গাড়ির যত্নে ৫টি জরুরি টিপস

শীতকালে গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিফ্রিজ, ইঞ্জিন অয়েল, উইন্ডশিল্ড ওয়াশার অয়েল মজুদ করে রাখা প্রয়োজন। এগুলোর সঠিক ব্যবহার শীতে গাড়িকে ঠিকমতো কর্মক্ষম রাখতে এবং শীতজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কাজে দেয়। শীতকালে নিম্নচাপের কারণে টায়ারের বাতাস কমে যায়। এজন্য গাড়ি চালানোর আগে টায়ারের বাতাস পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।

শীতে গাড়ির যত্নে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৫টি টিপস নিচে তুলে ধরা হলো। 

গাড়ির সম্পূর্ণ চেকআপ:

শুধু শীতকাল বলেই নয়, যে কোনও গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার সম্পূর্ণ চেকআপ করানো প্রয়োজন। যেহেতু এর ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রের সমাহার তাই বৈধ সার্ভিস সেন্টার থেকে দক্ষ কর্মচারী দ্বারা অবশ্যই আপনার গাড়িটি ভালোমতো পরীক্ষা করিয়ে নিন। এতে যে শুধুমাত্র পারফরম্যান্স ঠিক থাকবে তা নয় উপরন্তু মিলবে অনভিপ্রেত সমস্যা থেকে সুরাহা।

ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা:

অতিরিক্ত গরম যেমন গাড়ির মধ্যে থাকা ব্যাটারির জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর তেমনি অতিরিক্ত ঠান্ডাতেও দেখা যেতে পারে বেশ কিছু সমস্যা। গাড়ির ব্যাটারি যদি বহু পুরনো হয় কিংবা তাতে অল্প চার্জ থাকে তবে দীর্ঘক্ষণ অতিরিক্ত ঠান্ডার সংস্পর্শে থাকার ফলে সেই ব্যাটারি সম্পূর্ণ “ডেড” হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ তখন হাজারো চেষ্টা করে আপনার গাড়িটি স্টার্ট দেওয়া মুশকিল। এছাড়াও এই ঠান্ডায় যে সমস্ত জায়গার তাপমাত্রা প্রায় হিমাঙ্কের কাছে পৌঁছে যায় সে সব জায়গায় গাড়ির ব্যাটারিতে থাকা ডিসটিল্ড ওয়াটার জমে বরফে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দেয়। তাই সময় থাকতেই এই ব্যাটারির স্বাস্থ্য কোনো ভালো মেকানিক দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নিন।

চাকা পরীক্ষা:

গাড়ির চাকার ওপর সবচেয়ে বেশি ধকল যায়; তাই নিয়মিত চাকা পরীক্ষা করা জরুরি। শীতকালে গাড়ির চাকার বায়ুচাপ কমে যাওয়ার ফলে টায়ার পাংচার হরহামেশাই ঘটে। টায়ার প্রেশার চেক করুন এবং নির্দিষ্ট লিমিটেই রাখুন। গাড়ির টায়ার পুরনো হলেই পাল্টে ফেলুুন। 

লাইটের অবস্থা দেখা:

শীতের দিনগুলির অধিকাংশ সময়টাই আমাদের কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্য দিয়ে কাটে, বিশেষত সূর্যাস্তের পরবর্তী সময়ে অনেক জায়গাতেই গাঢ় কুয়াশায় ঢেকে যায় চারপাশ। এই সমস্ত সময়ে গাড়ির সাধারণ হেডলাইট পর্যাপ্ত দৃশ্যমানতা সৃষ্টি করতে পারে না। তখন প্রয়োজন পড়ে ফগলাইটের। আজকালকার দিনের বেশিরভাগ গাড়িতেই ইনবিল্ড ফগলাইট থাকলেও কম দামের মডেল কিংবা পুরনো গাড়িতে তা দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে বাজারে পাওয়া এক্সটার্নাল ফগলাইট অবশ্যই লাগিয়ে নিন আপনার গাড়িতে।

উইন্ডশিল্ড ও ওয়াইপারের ফাটল পর্যবেক্ষণ:

প্রবল বৃষ্টিতে যেমন গাড়ির কাছে জল জমে বাস্পের সৃষ্টি করে তেমনি ঠান্ডার সময়ে বাইরের বাতাসে সৃষ্টি হওয়া কুয়াশা ও ধোঁয়া একত্রিতভাবে জমা হয় গাড়ির উইন্ডশিল্ডে। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে বাইরের দৃশ্য দেখতে যথেষ্ট অসুবিধা হয় যা ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ। এই সময়তে কাজে লাগে এমন এক ধরনের পোর্টেবল যন্ত্র যা গাড়ির মধ্যে লাগালে সহজেই বাস্পকে দূরীভূত করতে সাহায্য করে। এগুলি অবশ্যই ব্যবহার করুন।

শীতকালে আরও ক্ষতি হওয়ার আগে আপনার গাড়িটি পরীক্ষা করে ঠিক করুন। যত তাড়াতাড়ি আপনি সমস্যার সমাধান করবেন, কম খরচে গাড়ি মেরামত করার সম্ভাবনা তত বেশি।

গাড়ীর যত্নে মাস্টার 7 রুলস

গাড়ি কেনার পর রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে ব্যয় হয় অনেকখানি শ্রম ও সময়। তবে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা গাড়ির আয়ু বাড়ানোর সাথে সাথে বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাবনা ও কমে যায়। এই কাজের জন্য নিম্নোক্ত টিপসগুলি অনুসরণ করা উচিত:

১. গাড়ি রাখার স্থান: গাড়ির রাখার জায়গা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির জন্য প্রথমেই সঠিক স্থান খুঁজে নেওয়া উচিত। যদি আপনার কাছে ঘরে গাড়ি রাখার জন্য স্থান না থাকে, তবে সার্ভিসিং কেন্দ্রে রাখা ভাল।

২. পরিবহন ও সংরক্ষণ: গাড়ি পরিবহন করার সময় যত্ন জরুরী। যখন গাড়ি পরিবহন করছেন, তখন চেক করে নিন গাড়ির সব পার্টস ঠিকঠাক আছে কি না।

৩. রেগুলার সার্ভিসিং ও মেইনটেনেন্স করুন: আপনার গাড়ির নিরাপত্তার জন্য রেগুলারভাবে সার্ভিসিং ও মেইনটেনেন্স করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সার্ভিসিং সময়ে গাড়ির সিস্টেমগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ তরল ও তরল গ্যাস পরিষ্কার করা দরকার যাতে আপনার গাড়ি একটি স্বাস্থ্যকর লংটেবিটে বজায় রাখবে।

৪. লাইট চেক করুন: গাড়ির লাইটগুলো নিরাপদভাবে কাজ করছে তা নিশ্চিত করুন। কারণ নাকি অস্পষ্ট লাইট যেকোন দুর্ঘটনার কারণে আপনার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন ঝুকির মুখে ঠেলে দেয়।

৫. গাড়ির ইঞ্জিন ও ব্রেকসমূহ নিয়মিত চেক করুন: গাড়ির সঠিকভাবে চলার জন্য ইঞ্জিন ও ব্রেকসমূহ সঠিকভাবে কাজ করতে হয়। ইঞ্জিন ও ব্রেকসমূহ নিয়মিত চেক করে সেগুলো পরিষ্কার রাখলে অনেক সমস্যা থেকে বাঁচতে পারেন।

৬. ইঞ্জিনের তেল নিয়মিত বদলান: গাড়ির ইঞ্জিন ভালো রাখতে প্রতি ৩ মাস অন্তর অথবা ৩০০০ মাইল চালানোর পর গাড়ির তেল বদলাতে হয়। গাড়িতে ভেইকেল ট্র‍্যাকার ব্যবহারের সাহায্যে গাড়ির যাবতীয় তথ্য (জ্বালানি খরচ, ফুয়েল কতটুকু ব্যয় হচ্ছে, কতটুকু রিফিল হচ্ছে) রিপোর্ট আকারে পাওয়া যায়। গাড়ি চলার সময় অসংখ্য রকম তরল পদার্থ এর সাথে সম্পর্ক হতে পারে। যেমন- ইঞ্জিনে তরল পদার্থ, রেডিয়েটর পানি ইত্যাদি। এগুলো নিয়মিত চেক করে আপনি সেগুলো সঠিকভাবে রাখতে পারবেন।

৭. টায়ারের চাপ নিয়মিত চেক করুন: গাড়ির টায়ার চাপ সঠিক রাখলে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা কম হয়। টায়ারের চাপ নিয়মিত চেক করে আপনি যে সমস্যা গুলো থাকলে সেগুলো সঠিকভাবে সমাধান করতে পারেন।

উপরের টিপসগুলো মেনে চললে শুধু  আপনার গাড়ির যত্ন ই নয়; আপনার নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও কাজে দেবে।